ইতিমধ্যে আমেরিকায় ৬৬ লাখ লোক বেকার ভাতা পাবার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে। ইউকে, অস্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রীয় খরচ কমানোর সিদ্ধান্ত আসছে সামনে। আমরাও সবার মত কিছু কমন জায়গায় ঝামেলায় পড়বো। এতে কিছু সেক্টর বুস্ট করবে আর কিছু সেক্টর হারাবে বাজার। অনেকদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে এর কিছু বিশ্লেষণঃ
কভিড ১৯ এর কারনে বাজারে যে অবস্থা হতে পারেঃ
১। বেকার হবেন সকল পেশার, সকল জেন্ডারের মানুষ। সংসার চালাতে হিমশিম খাবেন অনেকে। যাদের সঞ্চয় নেই তারা অনেক ঝামেলা পোহাবেন। যেহেতু অনেকে চাকরী হারাবেন উনাদের সন্তানেরাও স্কুল ফিস দিতে না পেরে ড্রপ আউট হবে। আজকে দেখলাম নেক্সট সেমিস্টারের ভর্তি বন্ধ (ইউজিসি ৬ তারিখে নোটিশ দিয়েছে প্রাইভেট ইউনির জন্য) কাজেই ছাত্র না পেলে অনেক শিক্ষক ও চাকরি হারাবেন।
আর্থিক দুর্দিন মিটাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে যাবে ব্লেন্ডেড ফরম্যাটে (এটা এমন একটা ফরম্যাট যেখানে একজন শিক্ষক অনেক ছাত্রকে পড়াবেন একি সাথে, একি সেমিস্টারে এবং পুরোটাই ভার্চুয়াল ভাবে অথবা খুবি কম ফেস টু ফেস ইন্টারেকসানে)। ইউনি গুলো E-learning platform লুফে নিবে অচিরেই। কাজেই প্রিয় শিক্ষকগন বেকার হবার প্রস্তুতি নিন। এতো টিচার লাগবে না সামনে ইউনি গুলোতে। টাকা বাঁচাতে চাইবে তারা, সেটাই স্বাভাবিক। ।
২। অনেক প্রাইভেট অফিস ইতিমধ্যে ভার্চুয়াল হয়ে গেছে। তারাও ইতিমধ্যে কম পারফর্ম করা কর্মীদের লিস্ট বানাচ্ছে আমার মনে হয়। হয়ত অনেককে হাফ বেতনে রাখবে এবং বলবে হোম অফিস করবেন। সেখানেও টাকা বাঁচানোর আপ্রান চেস্টা করবে তারা এবং আমার জানামতে অনেক অফিসে শুরু করে দিয়েছে। চাকরি চলে গেলে বিদেশে জব কে সেফগারড করার জন্য বীমা আছে। কিন্তু আমাদের দেশে নেই। Ombudsman এর কাছে গেলেও তারা লিগ্যালী সাহায্য করে কিন্তু আমাদের দেশে নাই।
৩। ব্যাঙ্ক গুলো বেশির ভাগ পিবি (পারসোনাল ব্যাঙ্কিং) করাবে এপের মাধ্যমে যাতে কাস্টমাররা ব্যাঙ্কে কম কম আসে এবং এতে টাকা বাঁচানোর জন্য তারা ছাঁটাই ও করবে বেশির ভাগ ফ্রন্ট লাইন কর্মীদের। মোবাইল এপ, এটিএম বেশি করে ব্যবহার করার জন্য ইতিমধ্যে আমাদের কে বলছে তারা। ফিজিকাল টাকার বদলে প্লাস্টিক মানির ব্যবহার বাড়বে। ।
৪। মোবাইল ফোন কোম্পানি (TELCO) গুলায় বেশি হারে ছাটায় হবে। তাদের কাজের ধরনের জন্য হোম অফিস এর ধারনা অনেক পপুলার হবে সেখানে। কাজেই কম লোকবল দিয়েই কাজ চলবে তাদের।
৫। নিম্ন বিত্তরা অনেকে চুরি ডাকাতিতে জড়াবে বেঁচে থাকার জন্য। খাবার যোগাতেই তারা হিমশিম খাবে আর তা করতে গিয়েই ওই সব কাজ শুরু করবে।
কোন সেক্টর বুম করবেঃ
এতো হতাশার পর ও কিছু সেক্টর বুম করবে বলে আমার মনে হচ্ছে।
যেমনঃ
১। স্বাস্থ্য কর্মী, কেয়ার গিভার, নার্স, ডাক্তার এবং যারা লাইফ সেভিং পেশায় আছে। এই সব পেশায় আরো অনেক লোক লাগবে। বিদেশেও চাহিদা থাকার কারনে অনেকে কাজের সুযোগ পাবেন। আর স্বাস্থ্য সামগ্রী যারা বানাতে পারেন তাদের জন্য সুদিন আসছে সামনে। টেলিমেডিসিন, রিমোট মেডিক্যাল এডভাইস বাড়বে অনেক। এপ ভিত্তিক ডাক্তারি সেবা বাড়বে অনেক। মেডিসিন সাপ্লাই দেয়ার অনেক স্টার্ট আপ আসবে সামনে।
২। অনলাইনে খাবার সাপ্লাই দেয়ার কোম্পানি বাড়বে অনেক। ক্লাউড কিচেন (Cloud Kitchen) আসবে আরো অনেক। করোনায় অনেক ছেলেও যেহেতু রান্নাবান্না শিখে গেছেন তারাও ক্লাউড কিচেনে জয়েন করে এক্সট্রা কিছু টাকা কামাতে পারবেন।
৩। যে পেশা গুলো সহজেই automation এ আনা যায় সেগুলা এবং artificial intelligence enabled ক্ষেত্র গুলোয় অনেক সুযোগ আসবে। কাজেই প্রস্তুতি নিন, টেকনোলজি শিখুন এই ভিড়ে হারিয়ে যাবার আগেই। Virtual learning, online platform খুব ভাল করে আয়ত্ত করুন। এতে আপনি পারদর্শী হলে দেশে বিদেশে ঘরে বসেই কাজ করতে পারবেন।
ফ্রিলেন্সিং এ অনেক কাজের সুযোগ বাড়বে। টেকনলজির জ্ঞান আপনাকে এগিয়ে রাখবে। কন্সাল্টিং এর আওতা বাড়বে অনেক। অনেকে গিগ কোম্পানি ও দিয়ে বসবে। Gig কম্পানি বলতে বুঝায় যারা ব্যাক্তিগত ভাবে কাজ করেন, যারা অনলাইনে কাজ করেন, অস্থায়ী কন্ত্রাক্টে কাজ করেন প্রজেক্ট বেইজডে, অন কলে কাজ করেন। আর knowledge based জ্ঞান তেমন আপনাকে বাঁচাবেনা, বাঁচাবে Skill বেইজড কাজ। কাজেই বেশি করে স্কিল শিখুন। এতে এখুনি দেরি না করে Udemy, EdX, Coursera য় ভর্তি হয়ে যান। পারলে digital marketing, big data analysis and machine learning, Coding, Robotics, graphics, content making, vidoe editing, animation, app making শিখুন। সামনে Data scientist দের সুদিন। Blockchain, emotional intelligence, social intelligence ও আপনাকে আলাদা করবে সবার থেকে। কাজেই এখুনি ডিজিটাল হয়ে যান, ভার্চুয়াল হয়ে যান।
লিখেছেন